বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিংয়ের সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়া শুরু করলেও বিপরীত চিত্র দেখা গেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের সামনের ছোট-বড় অবৈধ দোকানগুলোয়। বিদ্যুৎ যাচ্ছে না এসব দোকানে। কারণ, চোরা লাইন।
ঢামেকের জরুরি বিভাগের বাইরের এলাকায় হাসপাতাল ও সড়কের ফুটপাতজুড়ে অসংখ্য দোকান রয়েছে। রাস্তার কিছু অংশ দখল করেও বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসে প্রতিনিয়ত। এসব দোকান চলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। রাতে দোকান করতে মালিক-কর্মচারীরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, তার প্রায় সিংহভাগই চোরা লাইনের।
দোকানগুলো ঘুরে প্রয়োজনের বেশি লাইট-ফ্যানের ব্যবহার দেখা গেছে। রাস্তার ওপর যেসব ভ্রাম্যমাণ দোকান (ভ্যান-টুকরি) বসে, সেখানেও লাইট জ্বলছে। সবগুলো দোকানেই এনার্জি বাল্ব জ্বলে। চলে টেবিল ফ্যানও।
জানা গেছে, অবৈধ দোকানগুলোর অবৈধ বৈদ্যুতিক লাইনের বিনিময়ে আলাদা করে লাইট-ফ্যানের জন্য ‘দাম’ দিতে হয়। দাম তোলেন একরাম নামে এক ‘লাইনম্যান’। যদিও এ লাইনম্যান শব্দটির কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রভাব বিস্তার করে অনেকেই অবৈধ এ কাজ পরিচালনা করেন।
দোকানগুলো কোথায় : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে, পুলিশ ফাঁড়ির পাশে, হাসপাতালের সীমানাঘেষা রাস্তার দুই পাশের ফুটপাত জুড়ে অবৈধভাবে দোকানগুলো স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু আছে ঢামেকের চানখারপুল এলাকার অংশে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শহীদ মিনার পর্যন্ত ছোট ছোট শতাধিক দোকান বসে। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে খাবার হোটেল, ফলের দোকান, সাধারণ ব্যবহার্য মেডিকেল সামগ্রী, পোশাক, চটপটি-ফুচকা, চা-সিগারেটের টং, শুকনা খাবার বিক্রির দোকান। প্রতিটি দোকানেই চোরা লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়।
কে কি জানালেন : বছরের পর বছর ধরে এ সমস্ত দোকান পরিচালিত হয়ে আসলেও স্থানীয় সরকার, আসনের সংসদ সদস্যদের বিকার নেই। খোদ ঢামেক কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ স্থানীয় ও হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীর আত্মীয়-স্বজনের। তারা বলেন, যারা এসব দোকান থেকে বাজার করে থাকেন, তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই করেন। কারণ, দোকানগুলোয় যা পাওয়া যায়, তা কিনতে গেলে অনেক দূরে যাওয়া লাগে। রোগীর অবস্থা কখন কী হয়, বা অনেকেই তাদের স্বজনদের সঙ্গ ছাড়তে চান না। তারা উপকৃত হলেও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। পথচারীরাও হাসপাতাল লাগোয়া ফুটপাত দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন না দোকানগুলোর কারণে।
ফুটপাতের দোকানিরা জানান, বছরের পর বছর তারা চোরা লাইনে লাইট-ফ্যান ব্যবহার করে আসছেন। কেউ তাদের কিছু বলে না। বরং বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য লাইনম্যানরা এসে টাকা নিয়ে যান। সকাল থেকে লাইটের ব্যবহার কম হলেও সন্ধ্যা থেকে এলাকাটি আলোকিত হয়ে থাকে চোরা বিদ্যুৎ লাইনে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো নন্দিত একটি হাসপাতাল সংলগ্ন এমন চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনাও চলছে অনেক আগ থেকে। কিন্তু কিছুতেই কোনো সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। পথচারী, ঢাবি শিক্ষার্থী এমনকি ঢামেকের শিক্ষার্থীরাও বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত। কয়েকজন বলেন, পুলিশ ফাঁড়ির মতো জায়গায় যখন অবৈধ দোকান ও অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন চলে, সেখানে কিছু বলার থাকে না।
বিষয়গুলো নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, আমাদের হাসপাতালে থেকে কেউ অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিতেই পারে না। হাসপাতালের বাইরে বাউন্ডারি লাগোয়া অনেক দোকান আছে। ফুটপাতেও কিছু দোকান আছে। এসব দোকানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেখা যায়। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো বৈধ লাইন নেই। অন্য কোনো পন্থায় সেখানে বৈদ্যুতিক লাইন নেওয়া হয়েছে।
ঢামেক পরিচালক আরও জানান, সিটি কর্পোরেশন দুদিন পরপরই এইসব দোকান ভেঙে দিয়ে যায়। আমরাও নিজের উদ্যোগেও অনেকবার এ কাজ করেছি। সরকার এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ব্যাপার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাতে সম্মান রেখে হাসপাতালে প্রাচীর ঘেঁষা দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হবে। একই সঙ্গে কেউ যাতে আর দোকান বসাতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তা যেহেতু ঢাকা মেডিক্যালের আওতাধীন নয়, এ ব্যাপারে অন্যান্য সরকারি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে আমাদের কথা বলতে হবে।
এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, হাসপাতালের পাশে ফুটপাতে বা রাস্তায় বসা দোকানে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বৈধ নাকি অবৈধ, তা দেখবে বিদ্যুৎ বিভাগ। তারা যদি লাইন বিচ্ছিন্ন করার সময় পুলিশের সহযোগিতা চায়, তাদের সেটি করা হবে।
কাগজের সংবাদ/মেহেদী হাসান